গরুর মাংসের উপকারিতা ও অপকারিতা?
সামনে কোরবানির ঈদ, গরুর মাংসের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এখন আমাদের জানা প্রয়োজন গরুর মাংসের গুনাবলি।
গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক নামক মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চর্বি ছাড়া গরুর মাংসে অর্থাৎ লিনকাট মাংসে যেহেতু চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে ও প্রচুর প্রোটিন থাকে তাই ৩ আউন্স চর্বি ছাড়া মাংসে মাত্র ১৮০ ক্যালরি শক্তি থাকে কিন্তু ১০টিরও বেশি জরুরি খাদ্য উপাদান থাকে।
১৮ বছর ধরে পরিচালিত ৭২০০০ নারীদের ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ওয়েস্টার্নদের মতো বেশি বেশি লাল মাংস, মিষ্টি জাতীয় খাবার ও ফ্রেন্স ফ্রাই বা আলু ভাজা খেতেন তাদের হৃদরোগ, ক্যান্সার ও অন্য কিছু কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। লিনকাট বা চর্বি ছাড়া মাংসে অবশ্যই ৩ আউন্স পরিমাণ মাংসে ১০ গ্রামের কম মোট চর্বি, ৪.৫ গ্রামের কম সম্পৃক্ত চর্বি ও ৯৫ মিলি গ্রামের কম কলস্টেরল থাকতে হবে। তাই গরুর মাংস কেনার সময় লেবেল দেখে কিনতে হবে, যদি মাংস প্রাইম ধরনের হয় তবে মাংস সুস্বাদু ও নরম হলেও মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি। সিলেক্ট গ্রেডে চর্বির মাত্রা কম থাকে অর্থাৎ লিনকাট মাংস।
বিশেষজ্ঞরা জানান, লাল মাংস যা গরুর মাংসে পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে। সাদা মাংসে মায়োগ্লোবিন নামে এক ধরনের আয়রন বা লোহাযুক্ত প্রোটিন কম থাকে, আয়রনের রং যেহেতু লাল তাই মায়োগ্লোবিন কম থাকার জন্য সাদা মাংসের রং হালকা থাকে। সাদা মাংস সাধারণত পোলট্রি অর্থাৎ মুরগি ও টার্কির কিছু কিছু অংশে যেমন বুকের মাংসপেশিতে পাওয়া যায় কিন্তু পায়ের রানের মাংসে আবার মায়োগ্লোবিন বেশি থাকায় মাংসের রং লাল।
সম্পৃক্ত চর্বিতে খারাপ কলস্টেরল বা এলডিএল কলস্টেরল বেশি থাকে ও এই কলস্টেরল শরীরের বিভিন্ন রক্তনালিতে জমা হয়ে রক্তনালিতে ব্লক বা অ্যাথেরোস্কেলোরেটিক প্লাক তৈরি করে। লাল মাংসে এলডিএল বা খারাপ কলস্টেরল বা সম্পৃক্ত চর্বি সাদা মাংসের তুলনায় বেশি থাকে। কিন্তু যে পাখি উড়ে যেমন হাঁস তাদের বুকের মাংসেও মায়োগ্লোবিন বেশি থাকায় মাংসপেশি লাল। মাছের মাংস সাদা মাংস।
হৃদরোগ কিংবা ক্যান্সার ঝুঁকি থাকলে রেড মিট এড়িয়ে চলা উচিত। আবার এ কথাও ধ্রুব সত্য, গরুর মাংস বা রেড মিট হচ্ছে প্রাণীজ প্রোটিন, আয়রন, জিঙ্ক, থায়ামিন, রিবোফ্ল্যাভিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি-১২ এর অন্যতম উৎস। এই গরুর মাংসই হতে পারে স্বাস্থ্যকর খাবার যদি গরুর মাংসের চর্বি বাদ দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে খাওয়া যায়। পাশাপাশি এই রেডমিট-ই আবার হৃদরোগ এবং কোন কোন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। কিন্তু কৃশকায় গরুর মাংস কিংবা চর্বি বাদ দেয়া গরুর মাংসে চর্বি কম পরিমাণে থাকার জন্য ঝুঁকিও কম।
আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান আছে গরুর মাংসে। এগুলো হলো প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, আয়রন এবং রিবোফ্লেভিন।
অতিরিক্ত গরুর মাংস খেলে তা থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া বেশি পরিমাণে গরুর মাংস খাওয়ার কারণে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।
গরুর মাংসের দৈনিক নিরাপদ মাত্রা হলো ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রাম।
Post a Comment
0 Comments